Source: swadesi.com

সাহায্যপ্রার্থী ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ নেই: প্রতিবেদন খারিজ করলেন নেতানিয়াহু

By SwadesiNews
2 min read
Prime Minister Benjamin Netanyahu

জেরুজালেম, ২৮ জুন (এপি) – ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইজরায়েল কাটজ শুক্রবার ইসরায়েলের বাম-ঘেঁষা দৈনিক ‘হারেতজ’-এর একটি প্রতিবেদন জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে দাবি করা হয়েছিল যে গাজার ভেতরে সাহায্যকেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানোর জন্য ইসরায়েলি সৈন্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তারা এই প্রতিবেদনের তথ্যকে সামরিক বাহিনীকে “কুৎসা রটানোর উদ্দেশ্যে তৈরি বিদ্বেষপূর্ণ মিথ্যা” বলে অভিহিত করেছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, নবগঠিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF) প্রায় এক মাস আগে থেকে ওই অঞ্চলে সাহায্য বিতরণ শুরু করার পর থেকে খাবার খুঁজতে গিয়ে ৫০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও শত শত মানুষ আহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনি প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরায়েলি সেনারা সাহায্যকেন্দ্রের দিকে যাওয়া ভিড়ের ওপর গুলি চালিয়েছে। হারেতজ-এর প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে তারা এমন ঘটনাগুলোর তদন্ত করছে যেখানে সাহায্যকেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়েছে। তবে, তারা “সাধারণ মানুষের দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালানোর” অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

একটি আমেরিকান বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থার সহায়তায় গঠিত এই ফাউন্ডেশনটি গত এক মাস ধরে প্রধানত গাজার দক্ষিণ প্রান্তের চারটি স্থানে খাবারের বাক্স বিতরণ করছে।

সংস্থাটি একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছে, “GHF এই ঘটনাগুলোর বিষয়ে অবগত নয়, তবে এই অভিযোগগুলো এতটাই গুরুতর যে উপেক্ষা করা যায় না। তাই আমরা ইসরায়েলকে এই বিষয়গুলো তদন্ত করতে এবং সময় মতো স্বচ্ছতার সঙ্গে ফলাফল প্রকাশ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

খাবার খোঁজার জন্য ছুটে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা প্রায়শই সাহায্যকেন্দ্রের পথে এবং সেখানে পৌঁছানোর পর বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছেন। ইসরায়েল গাজায় আড়াই মাসের অবরোধ আরোপ করার পর হাজার হাজার মানুষ খাদ্যের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই অবরোধের কারণে GHF কেন্দ্রগুলো স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত খাদ্য, জল এবং ঔষধ প্রবেশ বন্ধ ছিল।

শিফা হাসপাতালের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু সেলমিহা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-কে জানিয়েছেন, শুক্রবার যে আটজনের মরদেহ তাদের হাসপাতালে এসেছে, তারা নেতজারিম-এর একটি GHF কেন্দ্র থেকে এসেছিল, তবে তারা কীভাবে মারা গেছেন তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়। GHF-এর একজন মুখপাত্র এই রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, শুক্রবার তাদের কেন্দ্র বা এর আশেপাশে কোনো ঘটনার খবর তাদের জানা নেই।

ড. সেলমিহা আরও বলেন, শুক্রবার তার হাসপাতাল উত্তর গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিমান হামলায় নিহত আরও ২০ জনের মরদেহ পেয়েছে।

হাজার হাজার ফিলিস্তিনি মাইলের পর মাইল হেঁটে এসব কেন্দ্রে পৌঁছান, আর এই যাত্রাপথে তাদের ইসরায়েলি সামরিক এলাকার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যেখানে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান যে ইসরায়েলি সেনারা ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ভারী গোলাবর্ষণ করে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অবশ্য বলছে, তারা শুধুমাত্র সতর্কতামূলক গুলি চালিয়েছে।

রাফাহ থেকে স্থানচ্যুত হওয়া মোহাম্মদ ফজউি এপি-কে বলেছেন যে, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি যখন শাকুশ এলাকার সাহায্যকেন্দ্রে হেঁটে গিয়েছিলেন, তখন তিনি খাবারের পরিবর্তে শুধুমাত্র খালি বাক্স পেয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আমাদের দিকে গুলি চালানো হয়েছে শুধুমাত্র সাহায্য পাওয়ার জন্য, আর মাত্র কিছু মানুষ সেটা পেয়েছে। সেখানে শহীদ ও আহত মানুষ আছেন। পরিস্থিতি খুব কঠিন।”

ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স নামের সংস্থাটি শুক্রবার এই বিতরণ ব্যবস্থাকে “মানবিক সহায়তার ছদ্মবেশে এক গণহত্যা” বলে নিন্দা করেছে এবং এটি অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে গাজায় ৬,০০০-এরও বেশি মানুষ নিহত এবং ২০,০০০-এরও বেশি আহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৫৬,০০০-এরও বেশি মানুষ নিহত এবং ১,৩২,০০০ আহত হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাধারণ মানুষ ও যুদ্ধকারীদের মধ্যে পার্থক্য করে না, তবে জানিয়েছে যে নিহত ৫৬,০০০ মানুষের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। ইসরায়েল বলছে, তারা শুধুমাত্র যুদ্ধবাজদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় এবং সাধারণ মানুষের মৃত্যুর জন্য হামাসকে দায়ী করে, কারণ তারা জনবহুল এলাকায় কাজ করে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার পর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, যেখানে প্রায় ১,২০০ জন নিহত এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ জন এখনও গাজায় বন্দি রয়েছে।

আওদা হাসপাতালের কর্মকর্তারা শুক্রবার জানিয়েছেন, সর্বশেষ নিহতদের মধ্যে ছয়জন বুরেইজ ক্যাম্পের শহীদ চত্বরের কাছে সাধারণ মানুষের ওপর ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরও ১০ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নেতাদের প্রতি “রাজনৈতিক সাহস” দেখিয়ে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যেকার চুক্তির মতো একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

গুতেরেস গাজায় সাহায্য বিতরণের জন্য জাতিসংঘের পরীক্ষিত পুরনো ব্যবস্থায় ফিরে আসারও আহ্বান জানান, যেখানে তিনি বলেন ইসরায়েলি সামরিক কার্যক্রমের কারণে “ভয়াবহ মাত্রার মানবিক সংকট” তৈরি হয়েছে।

গুতেরেস শুক্রবার জাতিসংঘের সাংবাদিকদের কাছে জোর দিয়ে বলেন, “খাবারের সন্ধান করা কখনোই মৃত্যদণ্ড হতে পারে না।”

সূত্র: এপি জিআরএস জিআরএস

বিভাগ: ব্রেকিং নিউজ

এসইও ট্যাগ: #swadesi, #News, #Netanyahu, #Gaza, #Palestine, #IsraelHamasWar

Share this article