জাকার্তা, ২৬ মে (এপি): যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ ও অর্থনৈতিক বৈশ্বিকীকরণে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং রবিবার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
লি চিয়াং শনিবার বিকেলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় তিন দিনের সফরে পৌঁছান। এটি ছিল তার এ বছরের প্রথম বিদেশ সফরের প্রথম গন্তব্য।
ইন্দোনেশিয়া ও চীন উভয়েই জি-২০ এবং ব্রিকস জোটের সদস্য।
শনিবার সন্ধ্যায় ইন্দোনেশিয়া-চীন বিজনেস রিসেপশনে লি চিয়াং ৬০ জন বিশিষ্ট চীনা ব্যবসায়ীকে নিয়ে উপস্থিত হন। তিনি বলেন, “বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এক ধরনের অচলাবস্থায় রয়েছে। একতরফা নীতি ও সুরক্ষাবাদ বাড়ছে, এবং বলপ্রয়োগের প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।” তিনি উল্লেখ করেন, এ বছর ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে এশিয়া-আফ্রিকার দেশগুলোর উদ্যোগে গঠিত অ-জোট আন্দোলনের ৭০ বছর পূর্তি।
লি বলেন, “বান্দুং-এর ঐক্য, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চেতনা গ্লোবাল সাউথ দেশের সংহতি ও সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সাত দশক পর, বিশ্ব আবারও একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে।”
তিনি সব দেশকে সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে মতপার্থক্য নিরসনের আহ্বান জানান।
প্রেসিডেন্ট সুবিয়ান্তো চীনা সরকার ও কোম্পানিগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যারা ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করেছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, প্রযুক্তি স্থানান্তর করেছে এবং ব্যবসায়িক আস্থা গড়ে তুলেছে। তিনি চীনা ব্যবসায়ীদের আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানান। গত বছর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৪৭.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, যা ৬.১ শতাংশ বৃদ্ধি।
লি জানান, টানা নয় বছর চীন ইন্দোনেশিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে নিকেল গলনাগার কারখানা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম উচ্চ-গতির রেলওয়ে ‘হুওশ’ সহ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, যা ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চালু হয়েছে এবং ইতিমধ্যে প্রায় এক কোটি যাত্রী পরিবহন করেছে।
ইন্দোনেশিয়া চায়, চীনের দ্রুত বর্ধনশীল বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পে নিকেলসহ অন্যান্য কাঁচামাল সরবরাহে আরও বড় ভূমিকা রাখতে।
রবিবার সুবিয়ান্তো জাকার্তার মেরদেকা প্রাসাদে লিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান এবং পরে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
লি বলেন, “বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিশাল অস্থিরতার মুখোমুখি, শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন নানা অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন।” তিনি ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে পাঁচটি মূল স্তম্ভ—রাজনীতি, অর্থনীতি, সামুদ্রিক বিষয়, নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক/মানবিক বিনিময়—নিয়ে সহযোগিতা আরও জোরদার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে জাকার্তা সফরের সময় চীনের পক্ষ থেকে ২১.৭ বিলিয়ন ডলারের নতুন বিনিয়োগ আসে, এর আগে জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকে ৪৪.৮৯ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
দুই নেতা স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন, স্বাস্থ্য ও কৃষিপণ্য রপ্তানিসহ এক ডজন চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
সুবিয়ান্তো বলেন, “আমি চীন ও ইন্দোনেশিয়ার জনগণ ও সরকারের সঙ্গে আমাদের সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারত্ব আরও শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। আমরা বিশ্বাস করি, এটি শুধু দুই দেশের জন্য নয়, পুরো এশিয়া অঞ্চলের জন্যও কল্যাণ বয়ে আনবে।”
ইন্দোনেশিয়ার বিনিয়োগমন্ত্রী রোসান রোসলানি জানান, লির সফরে ১০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা আগেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, পরিবহন, শিল্প ক্লাস্টার, খনিজ প্রক্রিয়াকরণ ও রাসায়নিক খাতে নতুন সহযোগিতার সুযোগও তৈরি হয়েছে।
লি রোববার ইন্দোনেশিয়ার সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং সোমবার মালয়েশিয়া যাবেন, যেখানে তিনি ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম আসিয়ান-জিসিসি-চীন অর্থনৈতিক সম্মেলনে ভাষণ দেবেন। এই সম্মেলনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
(AP) RHL




